সিংড়ায় যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুলশিক্ষক বরখাস্ত

বিডিনিউজ ১০ রিপোর্ট: নাটোরের সিংড়ার বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের গণিত শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করা যৌন হয়রানি ও ভোগান্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে ৩ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা পান।

বুধবার বিকেলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা, ক্লাস টেস্টে ভিডিও করা, বাজে আচরণ করা, গায়ে হাত দেওয়া ও যৌন হয়রানি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিয়াম স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের গণিত শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, ভোগান্তি, হুমকি প্রদানসহ মোট ১২টি অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ওই প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন শিক্ষার্থী এবং ১১ জন অভিভাবক। আবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুর রহমানকে দ্রুত অপসারণের পাশাপাশি কঠোর শাস্তির দাবিও করেন তারা।

অভিযোগে বলা হয়, সিংড়ার বিয়াম স্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক ফজলুর রহমান তার বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাতে ফোন করে কুপ্রস্তাব দেন। আর তার কুপ্রস্তাবে রাজি হলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বেশি নম্বর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। এ ছাড়া পাইভেট পড়ানো অবস্থায় একাধিক শিক্ষার্থীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়াসহ যৌন হয়রানি করেন।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল ‘সিংড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ঘটনা তদন্তে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল কুমারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবু রুশত মতিন ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির সহকারী প্রোগ্রামার মো. শফিকুল ইসলাম।

গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষকের যৌন হয়রানি তদন্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুশান্ত মাহাতোর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ বিষয়ে নবম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জুলফিকার আলম, মামনুর রশিদ ও সোলায়মান আলী বলেন, সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং দ্রুত ওই শিক্ষকের অপসারণ করায় আমরা খুশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইসআরসি) সিংড়া উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তাইফুর রহমান স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, স্কুলের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং সুনাম ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ তদন্ত কার্য পরিচালনা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় খুশি তারা।

এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে সিন্ধান্ত মোতাবেক তাকে স্কুল থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।